বেকারত্ব শব্দটি আমাদের সমাজে অভিশাপ হিসেবে দেখা যায়। এই বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অনেকে আত্মহত্যা করে। সমাজে বেকার শব্দটি খুব নিন্দনীয়। যুব সমাজের এই বেকারত্ব দুর করার জন্য নানা ধরণের চেষ্টা করে যাচ্ছে।

আমার কাছে বেকারত্বের সংজ্ঞা ভিন্ন। আমার মতে- বেকার বা বেকারত্ব কোন সমস্যা নয়। বেকার বা বেকারত্ব কোন অভিশাপ নয়। এই বেকার বা বেকারত্ব দুর করার জন্য সমাজ রাষ্ট্র ও বিভিন্ন এনজিও মিলে অনেক কর্মসংস্থানের চেষ্টা করছে। তারা বিভিন্ন কল-কারখানা প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছে মানুষকে কর্মসংস্থানের নামে কাজে লাগিয়ে অর্থ উপার্জন করার জন্য। আমি এই বেকার বা বেকারত্ব দুর করার জন্য একটি ইনষ্টিটিউট তৈরি করেছি, যেখানে মানুষ এসে শিখবে কর্ম কি! অর্থাৎ যার যার আপন কর্ম কি হওয়া উচিৎ এবং তারা নির্ণয় করবে কি হবে তার আপন কর্ম পদ্ধতি। সেই কর্ম পদ্ধতি অনুযায়ী হবে তার কর্মসংস্থান। আমি আগেই বলেছি- এই দুনিয়ায় কেউ বেকার নয়, বেকারত্ব কোন অভিশাপ নয়।  

আমার এইখানে যে বা যাহারা ভর্তি হয়ে নিয়মিত ক্লাস করবে তারা জানতে পারবে বেকারত্ব সমাধানের উপায়। যদি প্রতিটি মানুষ তার আপন কর্ম খুঁজে পায় কিংবা সন্ধান করতে পারে তাহলে তাকে কখনো বেকারত্ব গ্রাস করতে পারবে না। মানুষ কর্ম নিয়ে হতাশ হয় কারণ সে জানে না তার কর্ম কোনটা করা উচিৎ বা সঠিক। যাকে আমরা সিদ্ধান্তহীনতা বলি।

**একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে অথবা টাকা দিয়ে কিছু মানুষের কর্মসংস্থান করা যায়।এতে আরো অনেক লোক বেকার থেকে যায় কিন্তু আমার প্রতিষ্ঠানে যে বা যাহারা ভর্তি হবে তারা সবাই একটা কর্ম পদ্ধতি শিখতে পারবে। আর সেই কর্ম পদ্ধতি অনুযায়ী কাজ করলে ব্যক্তি জীবনে সফলতা আসবে।

আমার মতে- মানুষ কর্মের জন্য বেকার নয়, মানুষ কর্ম নির্ণয় না করতে পারার জন্য বেকার। পৃথিবীতে কেউ কর্মের অযোগ্য নয় শুধু কর্ম পদ্ধতিটা বুঝতে পারে না বলেই সে নিজেকে অযোগ্য মনে করে। এতে মানুষ হতাশ হয়ে পড়ে, শারীরিক অসুস্থ হয়ে পড়ে।

**

টাকা উপার্জনের কোন পথ বা পদ্ধতি না থাকলেই মানুষ নিজেকে বেকার বলে মনে করে। মানুষ রাতারাতি বিনা পরিশ্রমে বা কম পরিশ্রমে টাকা উপার্জন করতে চায়। এতেই মানুষ হতাশ হয়ে পড়ে। টাকা উপার্জনকেই মানুষ কর্মসংস্থান মনে করে। মানুষ কর্মসংস্থান খুঁজে কিন্তু সমাধান খুঁজে না। সমাধান খুঁজলে কর্মসংস্থান পাওয়া যায়। কর্মসংস্থান হিসেবে কেউ পায় চাকরি আবার কেউ করে ব্যবসা। চাকরি বা ব্যবসা এই দুটোই পরিবর্তনশীল। আজ যে চাকরি করে কাল তা যেকোন সময় চাকরিটা চলে যায় আবার নতুন কর্মসংস্থানের জন্য ছুটে চলে। বাড়তে থাকে হতাশা আর দুশ্চিন্তা। অনেকে সংসারের বোঝা সইতে না পেরে বিভিন্ন সমস্যায় আক্রান্ত হয়। আবার যে বা যাহারা ব্যবসা করে তাদের অনেকেই ব্যবসায় লোকসান করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এক ব্যবসা ছেড়ে অন্য ব্যবসা ধরে। হতাশার গ্লানি এসে ভীড় করে তার চোখে মুখে।  

তাই যে বা যাহারা আমার ইনষ্টিটিউটে ভর্তি হবে,তারা যার যার আপন কর্ম দক্ষতা নির্ণয়ের মাধ্যমে আপন কর্ম ও কর্ম-পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারবে। আশাকরি তারা কখনও জীবন যুদ্ধে হতাশ হবে না এবং ধৈর্য্য হারা হবে না কারণ সে জানে তার কর্ম পদ্ধতি কি-কেন-কিভাবে!!! সৃষ্টির প্রতিটি প্রাণী এবং উদ্ভিদ জানে তার আপন কর্ম এবং কর্ম-পদ্ধতি। শুধু সৃষ্টির সেরা অনেক মানুষই তা জানতে পারে না। যেমন –ধরুন আমার অনেক জমি আছে কিন্তু আমার ঘরের খাবারের জন্য চাল, ডাল, সবজি নাই। এর উত্তর কি হবে? অথবা জমিও আছে, টাকাও আছে, ফসলের বীজও আছে তারপরও আমার অভাব। এর ব্যাখ্যা কি দিবেন? মনে রাখবেন- মানুষ অর্থের জন্য বেকার হয় না, মানুষ জ্ঞানের অভাবে বেকারত্ব তৈরি করে।            

 ** মানবজাতির চরম লক্ষ্য-জ্ঞানলাভ। মানুষের চরম লক্ষ্য সুখ নয়, জ্ঞান। সুখ আনন্দ এই দুটোই সময়ের ব্যবধানে শেষ যায়। সুখই চরম লক্ষ্য-এরূপ মনে করা ভ্রম। জগতে আমরা যত দুঃখ দেখতে পাই, তার কারণ-মানুষ অজ্ঞের মতো মনে করে, সুখই আমাদের চরম লক্ষ্য। কালে কালে মানুষ বুঝতে পারে, সুখের দিকে নয়, জ্ঞানের দিকেই তাকে ছুটে চলতে হবে। দুঃখ সুখ উভয়েই আমাদের মহান্ শিক্ষক। কোন জ্ঞানই বাহির থেকে আসে না, সব ভেতর থেকে প্রকাশিত হয়।

মানুষ নিজেকেআবিষ্কার করে’(discovers) বাআবরণ উন্মোচন করে মানুষ যাহাশিক্ষা করে’, প্রকৃতপক্ষে সে উহাআবিষ্কার করে ‘Discover’ শব্দটির অর্থ-অনন্ত জ্ঞানের খনিস্বরূপ নিজ আত্মা হইতে আবরণকে সরিয়ে ফেলা। আমরা বলি, নিউটন মাধ্যাকর্ষণ আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি কি এক কোণে বসে তাঁহার জন্য অপেক্ষা করছিলেন? না, তাঁহার নিজ মনেই ইহা পুঞ্জীভূত ছিল। মানুষ যতপ্রকার জ্ঞানলাভ করে চলছে, সবই মন হইতে। জগতের অনন্ত পুস্তকাগার তোমারই মনে। বহির্জগৎ কেবল তোমার নিজ মনকে অধ্যয়ন করিবার উত্তেজক কারণ-উপলক্ষ্য মাত্র, তোমার নিজ মনই সর্বদা তোমার অধ্যায়নের বিষয়। আপেলের পতন নিউটনের পক্ষে উদ্দীপক কারণ-স্বরূপ , তখন তিনি নিজের মনকে  অধ্যায়ন বা পাঠ করতে লাগলেন।

**কর্মের দ্বারাই মানুষের চরিত্র গঠিত হয়। চরিত্র হলো মানুষের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কর্মের সমষ্টি। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কর্মই মানুষের কর্মসংস্থান ঠিক করে দেয়। যেমন চরিত্রই হলো মানুষের কর্মসংস্থানের মূল ভিত্তি। নবী মোহাম্মদ আঃ বলেছেন-মানুষের মধ্যে সেই ব্যাক্তি উত্তম, যার চরিত্র সবচেয়ে সুন্দর।

চরিত্র একটি মানুষের অমূল্য সম্পদ। আপনার চরিত্র নিয়ে চিন্তিত হন খ্যাতি নিয়ে নয়। যদি আয়নায় মানুষের চেহারা দেখা না গিয়ে চরিত্র দেখা যেত, তাহলে মানুষ তার চেহারা সুন্দর না করে চরিত্র সুন্দর করার প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত থাকতো। মানুষ কতটা শিক্ষিত তা গুরুত্বপূর্ণ নয় গুরুত্বপূর্ণ হলো সেটাই মানুষের চরিত্র কেমন এবং সে মানুষের সাথে কেমন ব্যবহার করে। মানুষের চেহারা সুন্দর হলেই যে চরিত্র সুন্দর হবে এমন ভাবাটা ঠিক নয়। একটা মানুষের চেহারা যেমনই হোক না কেন তার চরিত্রই বলে দেয় তার রূপ কেমন। যাদের চেহারা সুন্দর তাদের চরিত্র খারাপ হতে পারে। তাই চেহারা সুন্দরের চেয়ে চরিত্র সুন্দর করা মানুষের খুব জরুরী।

কথায় আছে- টাকা কড়ি হারালে কিছুই হারায় না, স্বাস্থ্য হারালে কিছু হারায়; কিন্তু চরিত্র হারালে সব কিছুই হারাতে হয়।

ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কর্ম দিয়ে যদি কেউ সুন্দর চরিত্র গঠন করে তাহলে তার কর্মসংস্থানের সমস্যা হয় না। টাকা দিয়ে ব্যবসা বা নিজের শ্রম দিয়ে চাকরি করে হয়তো অর্থের সংস্থান করা যায় কিন্তু এর ভিত্তি খুব দুর্বল। কিন্তু যে বা যাহারা আমার এখানে ভর্তি হয়ে নিজেকে জানতে চেষ্টা করবে তারা কখনো বিভ্রান্ত হবে না। এদের ভিত্তি হবে খুব মজবুত। এরা কখনও ভেঙ্গে পড়বে না। আমি তাদের শিখাই- লিডার হতে লোজার হতে নয়।

** যোগ্যতা সবর্দা কর্ম হইতে উৎপন্ন হয়। আমার কি কর্মসংস্থান হবে, তা আমাদের কর্মই নিরূপণ করে। আমাদের বর্তমান অবস্থার জন্য আমরাই দায়ী, এবং আমরা যা হতে ইচ্ছা করি, তা হইবার শক্তিও আমাদের মধ্যেই আছে। তাই যে বা যাহারা বেকার বা বেকারত্ব সমস্যা নিয়ে হতাশ তারা যোগাযোগ করে ভর্তি হতে পারেন।

 

নিজেকে জানার পাঠশালা- বেকারত্বের শিকড় উপড়ে ফেলা