আপনার মানসিকতা কোন ধরনের? মানসিকতা যে ধরনের হোক না কেন, আপনি চাইলে তা Transformation তথা রূপান্তর করে বিকাশমান মানসিকতা উন্নত করতে পারেন। এ জন্য কিছু সুত্র,পদ্ধতি ও কৌশল জানতে হবে।
সফল হওয়ার ক্ষেত্রে মানুষের বুদ্ধিমত্তার চেয়ে তার আচরণ ভালো পূর্বাভাস দিতে পারে। মানুষের মূল আচরণকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। একটি হচ্ছে স্থায়ী মানসিকতা (ফিক্সড মাইন্ডসেট) ও আরেকটি হচ্ছে বিকাশমান মানসিকতা (গ্রোথ মাইন্ডসেট)। স্থায়ী বা অবিচল মানসিকতা হচ্ছে—যখন কেউ নিজের সম্পর্কে ধরে নেয় যে সে যা তা–ই। কোনো পরিবর্তন তাঁর মধ্যে আনা সম্ভব নয়। কিন্তু যখন তাঁকে চ্যালেঞ্জ করা হয়, তখনই সমস্যা সৃষ্টি হয়। তাঁর গণ্ডির বাইরের কোনো কিছু চেপে বসলে তখন সে হতাশ হয়ে পড়ে।
কিন্তু যাঁরা বিকাশমান মানসিকতার ব্যক্তি তারা চেষ্টা করলে উন্নতি করতে পারবেন। বিভিন্ন দিক থেকে স্থায়ী মানসিকতার ব্যক্তিদের চাইতে বেশি সফলতা লাভ করতে পারবেন। এমনকি বুদ্ধিমত্তা বা আইকিউ কম থাকলেও প্রচেষ্টার কারণে এগিয়ে যেতে পারবেন। যেকোনো চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে তা নতুন কিছু শেখার সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করতে পারবে।
গবেষণায় দেখা যায়- সাধারণ বুদ্ধি আত্মবিশ্বাসী হতে উৎসাহ জোগায়। কিন্তু জীবনের সিদ্ধান্ত নির্ণয় করার ক্ষেত্রে কীভাবে বিপত্তি ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবেন তা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিকাশমান মানসিকতার ব্যক্তিরা এসব বিপত্তি খোলামনে স্বাগত জানান।
জীবনে সফলতা হচ্ছে ব্যর্থতা কীভাবে মোকাবিলা করা হয় সে বিষয়টি বোঝা। বিকাশমান মানসিকতার মানুষ এভাবেই ব্যর্থতাকে গ্রহণ করে। তাঁদের কাছে ব্যর্থতা হলো তথ্য। এটাকে ব্যর্থতা হিসেবে লেবেল লাগানো হয় মাত্র। বিকাশমান মানসিকতার ব্যক্তির কাছে সমস্যা সমাধানের ভিন্ন পথে যাওয়ার আরেকটি সুযোগ। আপনার মানসিকতা কোন ধরনের? মানসিকতা যে ধরনের হোক না কেন, আপনি চাইলে তা Transformation তথা রূপান্তর করে বিকাশমান মানসিকতা উন্নত করতে পারেন। এ জন্য কিছু পরিকল্পনা করে এগোতে পারেন।
প্রথমত-নিজেকে
অসহায় ভাববেন না
সবার জীবনেই কঠিন সময় আসতে পারে। তাই বলে নিজেকে পুরোপুরি অসহায় ভাববেন না। অসহায়ত্বের অনুভূতিতে কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবেন, সেটাই আসল পরীক্ষা। এটা থেকে কিছু শিখতে পারেন এবং সামনে এগিয়ে যেতে পারেন। তা না হলে আরও করুণ অবস্থায় পড়ে যাবেন। অনেকেই অসহায় অবস্থা থেকে নিজেকে সফলতার শীর্ষে নিয়ে গেছেন।
দ্বিতীয়ত-আবেগপ্রবণ হতে চেষ্টা করুন
একজন
সফল মানুষ নিরলসভাবে তাঁর অনুভূতি অনুসরণ করে থাকেন। প্রাকৃতিকভাবে কেউ হয়তো আপনার চেয়ে বেশি বুদ্ধিমান হতে পারে। কিন্তু বুদ্ধিতে আপনার ঘাটতি থাকলে তা আবেগ দিয়ে পূরণ করতে পারেন। যাঁরা সফল হয়েছেন, তাঁরা আবেগের কঠোর সাধনা করে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসেছেন। বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী ওয়ারেন বাফেটের পরামর্শ হচ্ছে আপনার সত্যিকারের আবেগের বিষয়টি ৫/২৫ পদ্ধতিতে খুঁজে বের করতে পারেন। এ পদ্ধতিতে আপনি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন—এমন ২৫টি বিষয় লিখে ফেলুন। এরপর নিচের ২০টি বিষয় বাদ দিন। যে ৫টিকে আপনি গুরুত্ব দেন তাই আপনার প্রকৃত আবেগ। বাকিগুলো আপনার চিত্তবিক্ষেপ।
তৃতীয়ত
–সমস্যার সমাধানে সফলতার বীজ খুঁজে বের করুন
বিকাশমান মানসিকতার ব্যক্তিরা কেবল ভয়কে জয় করেন না, তাদের সাহস অন্যদের চেয়ে বেশি। এর কারণ, তাঁরা জানেন ভয় ও উদ্বেগ আবেগকে নষ্ট করে দেয়। এ থেকে মুক্তির পথ হচ্ছে ভয় ও উদ্বেগের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। বিকাশমান মানসিকতার ব্যক্তিরা নিজের মনের সক্ষমতা বাড়াতে জানেন। তারা জানেন, সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সঠিক মুহূর্ত বলে কিছু নেই। তাই অপেক্ষা কিসের? যেকোনো বিপত্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে উৎকণ্ঠা উদ্বেগ দূর করে ব্যর্থতাকে পেছনে ফেলতে হবে। ইতিবাচক শক্তি অর্জন করতে হবে।
চতুর্থ
হচ্ছে-বাড়তি পথ পাড়ি দেওয়ার মানসিকতা বৃদ্ধি
সফল ব্যক্তিরা কখনো হতোদ্যম হন না। তাঁদের বাজে দিনেও সবকিছু দিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যান। নিজেকে সামনে এগিয়ে নিতে বাড়তি পথ পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করে থাকে। ব্রুস লির এক ছাত্র প্রতিদিন তাঁর সঙ্গে তিন মাইল দৌড়াতেন। একদিন তিন মাইল পথ ছোঁয়ার পথে ব্রুস লি বললেন, চলো আরও দুই মাইল দৌড়াই। তাঁর ছাত্র ক্লান্ত হয়ে পড়ে বললেন, আরও দুই মাইল দৌড়াতে গেলে আমি মারা যাব। ব্রুসলি বললেন, তবে দৌড়াও। তাঁর ছাত্র রেগে গিয়ে আরও পাঁচ মাইলের সীমা অতিক্রম করে ফেলল। খেপে গিয়ে ওই মন্তব্য নিয়ে ব্রুস লির কাছে জবাব চাইলেন ওই ছাত্র। ব্রুস লি তাঁকে বোঝালেন, ‘থেমে যেতে বা মরে যেতে পারতে। কিন্তু যদি তুমি যা পারো, সেখানেই তোমার সীমা নির্ধারণ করে ফেলো, তবে তা সারা জীবনে তোমার ওপর প্রভাব ফেলবে। এটা তোমার কাজে, নৈতিকতাসহ সবকিছুতে ছড়িয়ে যাবে। সীমা বলে কিছু নেই। স্থিরতা আছে, কিন্তু সেখানে থেমে গেলে চলবে না। তা ছাড়িয়ে যেতে হবে। যদি তাতে মরণ আসে, তবে তা আসুক। মানুষকে অবশ্যই তাঁর সীমা ক্রমাগত ছাড়িয়ে যেতে হবে।’ প্রতিদিন যদি তুমি অল্প কিছু উন্নতি করতে না পারো, তবে তুমি প্রতিদিন কিছুটা খারাপ করবে। এটা কেমন জীবন?
পঞ্চম
হচ্ছে-ফলাফলের প্রত্যাশা
বিকাশমান মানসিকতার ব্যক্তিরা জানেন, তাঁরা সময়-সময় ব্যর্থ হতে পারেন। তবে তারা ফলের আশা করতে ছাড়েন না। ফলের প্রত্যাশা থাকার অর্থ নিজেকে অনুপ্রাণিত রাখা এবং সফলতার চক্রে জ্বালানি জোগানো। যদি ভালো ফলের আশা না থাকে তবে কেন এত কিছু করার তাড়া থাকবে?
যষ্ট
হচ্ছে –লক্ষ্য অর্জনে নমনীয়
হওয়া
সবাই অপ্রত্যাশিত বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হয়। তবে সফল ও বিকাশমান মানসিকতার ব্যক্তি ওই বিপর্যয়কে উন্নতির সুযোগ হিসেবে দেখেন। যখন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তাঁর সামনে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় তখন কাঙ্ক্ষিত ফল না আসা পর্যন্ত তাঁরা নমনীয় হতে থাকেন। চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকেন।
সপ্তম
হচ্ছে-অভিযোগ করা যাবে না
সব সময় সবকিছু নিজের মন মতো বা নিজের পক্ষে হবে—এমনটা আশা করা বোকামি। নিজের বিপক্ষে গেলে তা নিয়ে অভিযোগ করা বাঁধাধরা মানসিকতার লক্ষণ। বিকাশমান মানসিকতার ব্যক্তি সবকিছুতে সুযোগ খোঁজেন বলে তারা অভিযোগ করার কথা ভাবেন না।
অষ্টম
হচ্ছে-সবকিছুকে এক সুতোয় গাঁথা
ছোট ছোট বিষয়ে নিজে কীভাবে জবাব দেওয়া উচিৎ, সেগুলোকে নজরে রাখা জরুরি। নিজেকে সঠিক পথে রাখতে নিজের দৈনন্দিন কাজে এসব বিষয়কে যুক্ত রাখতে হবে। তবেই সাফল্যের শীর্ষে উঠতে পারবেন।
আমাদের জ্ঞানের শতকরা নব্বই ভাগ স্বভাব পার্থিব সুখদুঃখের হ্রাসবৃদ্ধির উপর কোন কার্যকর প্রভাব বিস্তার করতে পারে না।আমাদের চেতনমনের অতি সামান্য অংশই ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জগতে বিচরণ করে এবং ঐ সামান্য ইন্দ্রিয়জ জ্ঞানকেই জীবন ও মনের সব-কিছু বলিয়া আমরা কল্পনা করি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমাদের অবচেতন মনের বিশাল সমুদ্রে উহা একটি সামান্য বিন্দুমাত্র। যদি আমাদের অস্তিত্ব শুধু ইন্দ্রিয়ানুভূতিগুলির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকত, তা হইলে আমরা যে-সব জ্ঞান অর্জন করি, সেগুলি শুধু ইন্দ্রিয় পরিতৃপ্তির জন্যই ব্যবহৃত হইত। কিন্তু সৌভাগ্যের বিষয় বাস্তব ক্ষেত্রে তাহা হয় না। পশুস্তর হইতে যতই আমরা উপরে উঠতে থাকি, আমাদের ইন্দ্রিয়সুখ-বাসনা ততই হ্রাস পাইতে থাকে ইন্দ্রিয়সুখ-নিরপেক্ষ হইয়া মনের পরম আনন্দের বিষয় হয়ে উঠে।
1 Comments
দারুণ
ReplyDelete