মেডিটেশনের জন্য সময় আলাদা করুন। মেডিটেশন শুধু আপনার শরীরের জন্য উপকারী নয়, এটি আপনার মস্তিষ্কের জন্যও বেশ উপকারী। গবেষণায় দেখা যায়, মেডিটেশন মস্তিষ্কের গ্রে-ম্যাটার বাড়ানোয় সহায়ক। আর মস্তিষ্কের এই গ্রে-ম্যাটার স্মৃতিশক্তির জন্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির উপায় গুলি কি কি?

 

মনে রাখা বা স্মৃতিতে রাখা বা মস্তিস্কে ধারণ করা বা ব্রেন মেমরিতে সেভ করে রাখা এই জাতীয় বিভিন্ন শব্দ আমরা ব্যবহার করে থাকি। তবে মনে রাখা আর মস্তিস্কে সেভ করে রাখা এই দুইটি এক নয়। এর সুক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে। অনেকে না জেনে দুটো কে এক মনে করে। তাই সাধকেরা শিক্ষা দেয় মনের শক্তি বাড়াতে আর তথাকথিত শিক্ষিত ডাক্তারেরা পরামর্শ দেয় খাদ্যের মাধ্যমে ব্রেনের শক্তি বাড়াতে।

*সাধারণ মানুষ তথাকথিত ডাক্তারদের কথাকে বেশী গুরুত্ব দেয়। তারা বুঝাতে চায় মানুষ খাদ্যের জন্য বাঁচে অথচ মহামানবগণ শিক্ষা দিয়েছে বাঁচার জন্য খাদ্য। সাধকেরা খাদ্য পরিমিত পরিমাণে খেতে বলে। তাঁরা শিক্ষা দেয় মনের শক্তি বাড়ানোর জন্য মেডিটেশন বা ধ্যান সালাত করার জন্য এতে মনযোগ বৃদ্ধি হয় এবং মন মনে রাখার শক্তি অর্জন করে। 

* মন আর ব্রেন এই দুটো বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা না থাকলে এর সঠিক সমাধান আশাকরা যায় না। এই অনুমান নির্ভর শিক্ষা আর প্রত্যয়ী জ্ঞান চিরকালই সাঙ্গঘর্ষিক । অনুমান নির্ভর শিক্ষা মানুষকে বস্তুবাদ শিক্ষা দেয় আর প্রত্যয়ী জ্ঞান মানুষকে আধ্যাত্ববাদ শিক্ষা দেয়।

**স্মৃতি বলতে আমরা কি বুঝি? কেউ বলছে-স্মৃতি হলো মস্তিষ্কে তথ্য ধারণ করে রাখার প্রক্রিয়া কিংবা মস্তিষ্কে ধারণকৃত তথ্যকে স্মৃতি বলে। এই প্রক্রিয়ায় প্রথমে তথ্য আহরণ করে মস্তিষ্কে জমা করা হয় এবং দরকার অনুযায়ী সেই তথ্য আবার ভান্ডার থেকে খুঁজে নিয়ে আসা হয়। জমাকৃত তথ্য হারিয়ে গেলে কিংবা সময়মত খুঁজে পাওয়া না গেলে তা দূর্বল স্মৃতিশক্তির লক্ষণ।

**মস্তিস্ক কি আমাদের দৈন্যন্দিন জীবনের সব কিছু সেভ করে রাখে? আমরা দেখতে পাই সারাদিনের ঘটে যাওয়া ১০০টি ঘটনার মধ্যে ১০/১৫টি বিষয় মনে আছে বাকী গুলো স্মৃতিতে বা স্মরণে আসছে না। এর মাধ্যমে বুঝা যায় সব কিছুই মস্তিস্ক সেভ রাখে না।

** আবার প্রশ্ন- মস্তিস্ক কোনটা সেভ করবে আর কোনটা করবে না তা নির্ণয় করে কে? এইখানেই রয়েছে সকল প্রশ্নের সমাধান। মস্তিস্ক একটি ডিভাইজ বা মেমরি কার্ড । মেমরি কার্ডের যেমন নিজে নিজে সেভ করার ক্ষমতা নাই অর্থাৎ ভালো মন্দ নির্ণয়ের যোগ্যতা নাই। মেমরি কার্ডে যা সেভ করা হয় তাহাই সে ধারণ করে রাখে। সেইটা গান হউক, নাচ হউক, ভালো ছবি কিংবা মন্দ ছবি, ভালো ভিডিও কিংবা মন্দ ভিডিও।

** মানুষের মস্তিস্ক ঠিক একই রকম। মস্তিস্কের কোন ক্ষমতা নাই ভালো মন্দ নির্ণয় করা। মস্তিস্কের চালিকা শক্তি মন সেই নির্ণয়ের কাজটি করে থাকে। মন নির্ণয় করে কোনটা ভালো আর কোনটা ভালো নয়। মন এই নির্ণয়ের শিক্ষাটা পায় সম্যক গুরুর নিকট থেকে সম্যক জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে। মন অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান অর্জন করে জ্ঞানী হয়। কিন্তু মস্তিস্ক কখনো জ্ঞানী হতে পারে না।

**মনের শক্তি বাড়ানো একটি উত্তম উপদেশ হলো মনযোগ বৃদ্ধি করা।মনযোগ বৃদ্ধি করতে না পারলে মন কখনো শক্তিশালী হবে না।মন শক্তিশালী না হলে মন ভালো মন্দ নির্ণয় করতে পারবে না। আমরা কি স্মৃতি শক্তি বাড়াবো নাকি মনযোগ বৃদ্ধি করবো? আমরা কি স্মৃতি শক্তি বাড়ানোর জন্য পুষ্টিকর ভিটামিন খাদ্য খাবো নাকি মনকে মেডিটেশনের মাধ্যমে মনযোগ বৃদ্ধি করবো? এইসবের সঠিক উত্তর না জানলে সঠিক সমাধান করা যাবে না। আমাদের নিজেকে জানার পাঠশালায় এই বিষয়ে শিখানো হয়। মনে রাখবেন- মন যত মনযোগী হবে স্মৃতিশক্তি তত বৃদ্ধি পাবে। ইহাই স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর একমাত্র উপায়।

মনোযোগ কি?

প্রতিদিন চলার পথে আমরা অনেক কিছু দেখি, শুনি কিন্তু তার সবকিছুর প্রতি আমরা একই সাথে নজর দেইনা। কেন দেইনা? কারণ একই সময়ে আমরা একাধিক বিষয়ে মনোযোগ দিতে পারিনা। সেজন্য মনোযোগ দেয়ার সময় প্রথমে মনোযোগের ক্ষেত্র থেকে কেবল একটি বিষয়কে নির্দিষ্ট করে নেওয়া হয় তার পর আমরা সেই বিষয়ের প্রতি মনোযোগ দেই। সাধারণ কথায় বলা যায় মনোযোগ হল, কোন কিছুর প্রতি গভীর বা নিবিড়ভাবে লক্ষ করা। যেমন, একজন ব্যক্তি কোন উপন্যাস পড়তে পড়তে কেদেই ফেলল, বলুনতো এটা কেন হল? এর কারণ, ব্যক্তি উপন্যাসের সাথে নিজেকে একান্ত করে ফেলেছিল। সে উপন্যাসে এতটাই মনোযোগ দিয়েছে যে, কিছুক্ষনের জন্য হলেও সে পরিবেশে ডুবে গিয়েছিল। মনোযোগ একটি নির্বাচনধর্মী মানসিক প্রক্রিয়া। আমরা একটি বিষয়ে একই সাথে অনেকক্ষণ মনোযোগ ধরে রাখতে পারিনা। এটা সর্বদা পরিবর্তনশীল। কোন বিশেষ সময়ে আমরা বিশেষ বস্তুর প্রতি মনোযোগী হয়ে উঠি। আমরা যখন বস্তুর প্রতি মনোযোগ দেই তখন তা আমাদের চেতনার কেন্দ্রস্থলে অবস্থান করে। মনোযোগ সাময়িকভাবে আমাদের চেতনাকে অন্য সবকিছু থেকে সরিয়ে কেবল নির্দিষ্ট একটি বিষয়ে নিবদ্ধ করে।

মনোযোগে তিনটি উপাদান রয়েছে, যেমন: বাছাই, গভীর দৃষ্টি একটি মানসিক ক্রিয়া। মনোযোগ প্রদানের জন্য বস্তু বা ঘটনা বাছাই করতে হয়। এক সাথে সব কিছুর উপর আমাদের মনোযোগ নিবদ্ধ হয় না বা আমরা তা করতেও পারি না। অতপর আমরা মনোযোগের জন্য বাছাই করা বস্তু বা ঘটনার উপর গভীর দৃষ্টি দেই যাতে তা আমাদের বোধগম্য হয়। এই দৃষ্টিদানের সাথে সাথেই আসে মানসিক ক্রিয়া যা আমদের চেতনায় বস্তু বা ঘটনা সম্পর্কে একটা সম্পূর্ণ বোধ জন্মায়। সুতরাং এই উপাদানের ভিত্তিতেই বোঝা যায় যে মনোযোগ এমন একটা মানসিক ক্রিয়া যা আমাদের চেতনাকে কোন বস্তু বা ঘটনার প্রতি নিবদ্ধ করে।

**এই মনযোগ বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন আগ্রহ। আগ্রহ না থাকলে মনযোগ বৃদ্ধি হবে না। যে কাজের প্রতি যত আগ্রহ সেই কাজের প্রতি তত মনযোগ।

আগ্রহ হল এমন একটি মানসিক অবস্থা যার সাথে ইচ্ছা, অনুভূতি কাজের গতি সংযুক্ত রয়েছে। যা আমরা ভালবাসি বা পছন্দ করি তা সহজেই আমাদের দৃষ্টি কেড়ে নেয়। খেয়াল করে কি দেখেছেন, বাড়িতে অনেক সময় টিভি চলতে থাকলেও আমরা তার কিছু অংশ দেখি কিংবা কিছু অংশ দেখিনা। কেন এমন করি? এর কারণ হল ওই অনুষ্ঠানের প্রতি আমাদের আগ্রহ নেই। কিন্তু টিভির যে অনুষ্ঠান আগ্রহের তা ঠিকই গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখি। কোন বিষয়ের প্রতি আগ্রহ বিভিন্ন কারণে গড়ে উঠতে পারে যেমন, জৈবিক মানসিক চাহিদা, মনোভাব, অনুকরণ, সামাজিক প্রভাব প্রয়োজন ইত্যাদি। আগ্রহ দীর্ঘস্থায়ী বা ক্ষণস্থায়ী উভয়ই হতে পারে। মনোবিজ্ঞানীরা বলেছেন-আগ্রহ হল নতুন জ্ঞান অর্জনের জন্য মনের প্রস্তুতিব্যক্তির কোন বিশেষ বস্তুর প্রতি ক্রিয়া বা অন্য ব্যক্তির প্রতি মানসিক আকর্ষণই হলো আগ্রহ

মনোযোগ আগ্রহ

সাধারণত আগ্রহের ভিত্তিতেই আমরা কোন বস্তু নির্বাচন করি তার প্রতি মনোযোগ দেই আগ্রহ মনোযোগের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। ব্যক্তির মধ্যে আগ্রহ ক্ষণস্থায়ী, দীর্ঘস্থায়ী কিংবা হঠাৎ করেও হতে পারে। ধরুন, এক ব্যক্তি একটু পরে বাজারে যাবে সুতরাং এর আগে সে পত্রিকায় বাজারদর দেখার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠতে পারে। বাজার করে ফিরে আসার পর তার আর ব্যাপারে আগ্রহ থাকবেনা। কিন্তু কেউ হয়ত বড় ডাক্তার হতে চায় এর জন্য তাকে মনোযোগের সঙ্গে নিয়মিত পড়ালেখা অনুশীলন চালিয়ে যেতে হবে। এভাবে আগ্রহ ব্যক্তিকে সক্রিয় করে তোলে। আগ্রহ জন্মগত আবার অর্জিত হতে পারে। গানশোনা বা সুরের প্রতি আগ্রহ জন্মগত হতে পারে। কিন্তু বিখ্যাত শিল্পী হবার আগ্রহ সমাজ জীবন থেকেই সৃষ্টি হতে পারে।

আগ্রহ হল সুপ্ত মনোযোগ আর মনোযোগ হলো সক্রিয় আগ্রহ। যদিও আগ্রহ ছাড়া কাজে মনোযোগ দিতে পারি না তবুও কোন কোন ক্ষেত্রে নিছক কাজের বা প্রয়োজনের খাতিরে আমরা কোন বিষয়ে মনোযোগ দেই। আগ্রহ মনোযোগের অনেকগুলি শর্তের একটি। আসলে আগ্রহ মনোযোগ একই সূত্রে গাঁথা এবং পরস্পর সম্পর্ক যুক্ত। আগ্রহের আধিক্য বা স্বল্পতার উপর মনোযোগের স্থায়িত্ব নির্ভর করে। অর্থাৎ কোন বিষয়ে অধিক আগ্রহ থাকলে সে বিষয়ে দীর্ঘ সময় মনোযোগ ধরে রাখতে পারি। যেমন যাদের মাছ ধরার নেশা রয়েছে তারা দীর্ঘ সময় ধরে পানিতে ছিপ ফেলে ফাতনার দিকে মনোযোগ নিবদ্ধ রাখতে পারে, একটুও ক্লান্ত হয় না

মনোযোগ হল কোন বস্তু বা ঘটনার প্রতি গভীরভাবে লক্ষ করা বা মনোনিবেশ করা। মনোযোগের তিনটি উপাদান থাকে। যেমন- বাছাই, গভীর দৃষ্টি মানসিক ক্রিয়া। অপর দিকে আগ্রহ হল এমন একটি মানসিক অবস্থা যার সাথে ইচ্ছা অনুভূতি বা কাজের গতি সংযুক্ত থাকে। বিভিন্ন কারণে আমাদের আগ্রহ সৃষ্টি হয়। যেমন, জৈবিক মানসিক চাহিদা, মনোভাব, অনুকরণের ইচ্ছা, সামাজিক প্রভাব ইত্যাদি। প্রয়োজন অবস্থার প্রেক্ষিতে আগ্রহ ক্ষণস্থায়ী দীর্ঘ স্থায়ী উভয়ই হতে পারে। আগ্রহ মনোযোগ একে অপরের পরিপূরক।